কবিতা – নিঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর||Nijhorer Swopnovongo bangla kobita


কবিতা  – নিঝরের স্বপ্নভঙ্গ

     কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)


আজি এ প্রভাতে রবির কর।
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান !
না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।
থর থর করি কাঁপিছে ভূধর,
শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
গরজি উঠিছে দারুণ রােষে।
হেথায় হােথায় পাগলের প্রায়
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায়
বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।
কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন,
চারি দিকে তার বাঁধন কেন!
ভাণ্ডু রে হৃদয়, ভাঙ রে বাঁধন,
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন,
লহরীর ‘পরে লহরী তুলিয়া
আঘাতের ‘পরে আঘাত কর।
মাতিয়া যখন উঠেছে পরান
কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ!
উথলি যখন উঠেছে বাসনা
জগতে তখন কিসের ডর!
আমি ঢালিব করুণাধারা,
আমি ভাঙিব পাষাণকারা,
আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া
আকুল পাগল-পারা।
কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া,
রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া,
রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি।
শিখর হইতে শিখরে ছুটিব,
ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি।
এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মাের,
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে—প্রাণ হয়ে আছে ভাের ।
কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ-
দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান।
ওরে, চারি দিকে মাের
এ কী কারাগার ঘাের-
ভাড় ভা ভা কারা, আঘাতে আঘাত কর।
ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি,
এসেছে রবির কর।|

দৃষ্টি কবিতা || Dristi Bangla Kobita by Rabindranath Tagore

কবিতা  – দৃষ্টি

  কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)


বুঝি গাে সন্ধ্যার কাছে শিখেছে সন্ধ্যার মায়া
ওই আঁখিদুটি, চাহিলে হৃদয়-পানে। মরমেতে পড়ে ছায়া,
তারা উঠে ফুটি।
আগে কে জানিত বলাে। কত কী লুকানাে ছিল
হৃদয়নিভৃতে-
তােমার নয়ন দিয়া আমার নিজের হিয়া
পাইনু দেখিতে। কখনাে গাও নি তুমি, কেবল নীরবে রহি
শিখায়েছ গান-
স্বপ্নময় শান্তিময় পূরবীরাগিণীতানে
বাঁধিয়াছ প্রাণ।
আকাশের পানে চাই, সেই সুরে গান গাই
একেলা বসিয়া।
একে একে সুরগুলি অনন্তে হারায়ে যায়।
আঁধারে পশিয়া।
—————-






প্রথম দিনের সূর্য

কবিতা  -প্রথম দিনের সূর্য

কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)


প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নূতন আবির্ভাবে—
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।


বৎসর বৎসর চলে গেল।
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিমসাগরতীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-
কে তুমি?
পেল না উত্তর।

Romini session

Prathama dinēr sūrya
      Rabindranath Tagore

prathama dinēra sūrya
praśna karēchila
sattāra nūtana ābirbhābē—
kē tumi?
Mēlē ni uttara.


Baṯsara baṯsara calē gēla.
Dibasēra śēṣa sūrya
śēṣa praśna uccārila
paścimasāgaratīrē
nistabdha sandhyāẏa-
kē tumi?
Pēla nā uttara.

পরিচয় কবিতা কবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || Porichoy Poem by Rabindranath tagore

কবিতা – পরিচয়

কবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে,
বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে।
তোমরা শুধায়েছিলে মোরে ডাকি
পরিচয় কোনো আছে নাকি,
যাবে কোন্‌খানে।
আমি শুধু বলেছি, কে জানে।
নদীতে লাগিল দোলা, বাঁধনে পড়িল টান,
একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান।
সেই গান শুনি
কুসুমিত তরুতলে তরুণতরুণী
তুলিল অশোক,
মোর হাতে দিয়ে তারা কহিল, “এ আমাদেরই লোক।’
আর কিছু নয়,
সে মোর প্রথম পরিচয়।

তার পরে জোয়ারের বেলা
সাঙ্গ হল, সাঙ্গ হল তরঙ্গের খেলা;
কোকিলের ক্লান্ত গানে
বিস্মৃত দিনের কথা অকস্মাৎ যেন মনে আনে;
কনকচাঁপার দল পড়ে ঝুরে,
ভেসে যায় দূরে–
ফাল্গুনের উৎসবরাতির
নিমন্ত্রণলিখন-পাঁতির
ছিন্ন অংশ তারা
অর্থহারা।
ভাঁটার গভীর টানে
তরীখানা ভেসে যায় সমুদ্রের পানে।
নূতন কালের নব যাত্রী ছেলেমেয়ে
শুধাইছে দূর হতে চেয়ে,
“সন্ধ্যার তারার দিকে
বহিয়া চলেছে তরণী কে।’
সেতারেতে বাঁধিলাম তার,
গাহিলাম আরবার–
মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক
আর কিছু নয়,
এই হোক শেষ পরিচয়।

মাস্টারবাবু by রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || Master Babu Kobita By Robindranath Tagore

মাস্টারবাবু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি আজ কানাই মাস্টার,

পোড়ো মোর বেড়ালছানাটি।

 আমি ওকে মারি নে মা, বেত,

মিছিমিছি বসি নিয়ে কাঠি।

রোজ রোজ দেরি করে আসে,

পড়াতে দেয় না ও তো মন,

 ডান পা তুলিয়ে তোলে হাই

যত আমি বলি ‘শোন্ শোন্’।

দিনরাত খেলা খেলা খেলা,

লেখায় পড়ায় ভারি হেলা।

আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’,

ও কেবল বলে ‘মিয়োঁ মিয়োঁ’।

প্রথম ভাগের পাতা খুলে

আমি ওরে বোঝাই মা, কত—

 চুরি করে খাস নে কখনো,

ভালো হোস গোপালের মতো।

যত বলি সব হয় মিছে,

কথা যদি একটিও শোনে—

মাছ যদি দেখেছে কোথাও

 কিছুই থাকে না আর মনে।

চড়াই পাখির দেখা পেলে

 ছুটে যায় সব পড়া ফেলে।

 যত বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’,

 দুষ্টুমি করে বলে ‘মিয়োঁ’।

 আমি ওরে বলি বার বার,

‘পড়ার সময় তুমি পোড়ো—

তার পরে ছুটি হয়ে গেলে

খেলার সময় খেলা কোরো।

‘ ভালোমানুষের মতো থাকে,

আড়ে আড়ে চায় মুখপানে,

এম্নি সে ভান করে যেন

যা বলি বুঝেছে তার মানে।

একটু সুযোগ বোঝে যেই

কোথা যায় আর দেখা নেই।

আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’,

 ও কেবল বলে ‘মিয়োঁ মিয়োঁ

স‍ৎপাত্র কবিতা কবি-সুকুমার রায় ||Satpatra | Sot Patra | Sat patro Poet:- Sukumar Roy | Sukumar Ray

শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—

 তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?

গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?

জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?

মন্দ নয় সে পাত্র ভালো 

 রঙ যদিও বেজায় কালো ;

 তার উপরে মুখের গঠন

অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;

বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—

ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !

উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে

 ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।

বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—

কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।

মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—

একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;

আরেকটি সে তৈরী ছেলে,

জাল করে নোট গেছেন জেলে ।

কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়

যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।

গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে

পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।

কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,

কংসরাজের বংশধর !

শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের

কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—

 যহোক, এবার পাত্র পেলে,

এমন কি আর মন্দ ছেলে ?

আমার পণ কবিতা || amar pon poem by modonmohan torkalonkar

আমার পণ
মদনমােহন তর্কালঙ্কার


সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারা দিন আমি যেন ভালাে হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মাের গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভালাে মনে।
ভাইবােন সকলেরে যেন ভালােবাসি,
একসাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভালাে ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারাে দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লােভ সামলিয়ে থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দিই ফঁাকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারাে সনে,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।

পুঁটু নাচে কোনখানে || putu nache konkhane bangla chora

পুঁটু নাচে


পুঁটু নাচে কোনখানে?
শতদলের মাঝখানে।
সেখানে পুঁটু কী করে?
চুল ঝাড়ে আর ফুল পাড়ে
ডুব দিয়ে সে মাছ ধরে

খােকা গেছে মাছ ধরতে || khoka geche mach dhorte poem

খােকা গেছে মাছ ধরতে


খােকা গেছে মাছ ধরতে
ক্ষীর নদীর কূলে,
ছিপ নিয়ে গেল কলা ব্যাঙে
মাছ নিয়ে গেল চিলে।

jana gana mana জন গণ মন Indian National Anthem by Rabindranath Tagore

Jana Gana Mana Indian National Anthem in Bengali
জন গণ মন (Bengali)

জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।